গোলাপ জলের উপকারিতা - গোলাপ জলের অপকারিতা

প্রতিদিনের কর্মজীবনের ব্যস্ততায় আমরা অনেকেই নিজের ত্বকের যত্ন নিতে সময় পায়না, কিন্তু তা বললে কি হয়। নিজেকে সুন্দর দেখাতে তো আমরা সকলেই চাই, তাই না? ব্যস্ততার কারণে যদি ত্বকের যত্নের সময় না হয় সেক্ষেত্রে, গোলাপ জলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন করতে পারেন। তবে, এটা ঠিক কারো কারো ক্ষেত্রে গোলাপ জল ব্যবহারে কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে।

এর কারণ হলো গোলাপ জলের উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি ত্বক অনুযায়ী কারো কারো গোলাপ জল ব্যাবহারে, গোলাপ জলের অপকারিতা দেখা দেয়। আর তাই আমাদেরকে জানতে হবে গোলাপ জলের উপকারিতা এবং গোলাপ জলের অপকারিতা গুলো ঠিক কি কি। আমরা নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করতে যাচ্ছি, গোলাপ জলের উপকারিতা এবং গোলাপ জলের অপকারিতা নিয়ে। 

টোনারের কাজ করে গোলাপ জলঃত্বক পরিষ্কার করতে গোলাপ জল টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপ জল ব্যবহারে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করে তোলে এবং ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। আপনি গোলাপ জলের টোনারটি ফেসিয়ালের সময় ব্যবহার করতে পারেন, আবার আপনি মেকআপ অপসারণের সময় ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার মুখে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে এবং মুখে যদি কোন রকম ফুসকুড়ি বের হয় সেটাও ঠিক হয়ে যাবে।

ক্লিনজার হিসেবে গোলাপ জল ব্যবহারঃগোলাপ জল টোনার হিসেবে যেমন ব্যবহার করা যায়, ঠিক তেমনিভাবে ক্লিনজার হিসেবেও খুব ভালো কাজ করে। মুখ পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে গোলাপ জল বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমরা সাধারণত মেকআপ পরিস্কার করার সময় ফেসওয়াস দিয়ে মেকআপ পরিস্কার করি। তবে আমরা চাইলে ফেসওয়াশ এর পরিবর্তে গোলাপ জল ব্যবহার করে মেকআপ পরিস্কার করতে পারি।

এতে করে ত্বকের কোনরকম ক্ষতি হয় না বরং অনেক বেশি কোমল ও নরম হয়ে থাকে। স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য সবার আগে প্রয়োজন ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখা। আর ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখার জন্য, গোলাপ জলের কোন তুলনা হয় না। আর তাই ত্বকের ময়লা দূর রাখতে হলে গোলাপ জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।

মুখের যে কোন দাগ দূর করতে গোলাপ জলঃঅনেক সময় আমাদের ত্বকে রোদে পোড়া দাগ কিংবা ব্রণের দাগ, চোখের নিচের কালো দাগ, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা যায়। এ সমস্ত দাগ গুলো দূর জন্য আমরা গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারি। চোখের নিচের কালো দাগ, রোদে পোড়া দাগ, এই সমস্ত দাগ দূর করতে গোলাপ জল কার্যকর ভূমিকা রাখে।

চুলের যত্নে গোলাপ জলঃ গোলাপ জল শুধুমাত্র আমাদের ত্বকের জন্যই যে উপকারী এমনটা নয়। আমাদের চুলের জন্যও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গোলাপ জলের নিয়মিত ব্যবহারে চুলের খুশকি সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং সেই সাথে চুল লম্বা করতেও সাহায্য করে। আপনি চাইলে গোলাপ জলের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চুল থেকে খুশকি দূর হয়ে যাবে, সেই সাথে আপনার চুল অনেক সুন্দর হবে।

রূপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার রয়েছে অনেক। এক সময় গোলাপ, ফুল হিসেবেই ব্যবহৃত ছিল। তবে এখন, গোলাপ থেকেই তৈরি করা হয় গোলাপ জল। নারীদের রূপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার ব্যাপকভাবে থাকে প্রতিনিয়ত। তবে দোকান থেকে কিনে আনা গোলাপ জলের কার্যকারিতা কিছুটা কম হতে পারে। আর সেই জন্য চেষ্টা করব গোলাপ দিয়ে ঘরে বসেই গোলাপ জল তৈরি করার। কারণ এটি শতভাগ ভেজালমুক্ত থাকে। রূপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার নিয়ে কয়েকটি টিপস আলোচনা করা হল।

ত্বক উজ্জ্বল করতে গোলাপ জলের ব্যবহারঃ রূপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার, সুন্দর ত্বক আমরা সকলেই চাই। আর এ সৌন্দর্যের জন্যই ত্বক পরিষ্কার রাখতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফেসওয়াশ ব্যবহার করে থাকি। ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না এমনটি নয়, তবে আমরা অনেকেই ত্বকের ধরন অনুযায়ী বুঝে ফেসওয়াশ ব্যবহার করি না, আমরা ত্বক পরীক্ষা করে কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করি না।

এর ফলে অনেক সময় ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আর তাই আপনি চাইলে ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য গোলাপ জলের ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখাবে।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহারঃনিত্য দিনের ব্যস্ততায় কখন যে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায় বুঝতেও পারিনা আমরা। আর এই চোখের নিচের কালো দাগের জন্যই ত্বকের সৌন্দর্য অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে চোখের নিচের কালো দাগ খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায় এবং ত্বক অনেক বেশি সুন্দর দেখায়।

মেকআপ অপসারণে গোলাপ জলের ব্যবহারঃআমরা প্রায় দিন মেকাপের ব্যবহার করে থাকি। আর এই মেকআপ অপসারণের জন্য ফেসওয়াশ ব্যবহার করি। আমরা ফেসওয়াশের পরিবর্তে গোলাপ জলের ব্যবহার করতে পারি, এর ফলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হবে। সেই সাথে ত্বক অনেক বেশি কোমল ও নরম হবে

গোলাপ জলের উপকারিতা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি গোলাপ জলের অপকারিতা ও রয়েছে। তবে গোলাপ জলের অপকারিতা তুলনামূলক খুবই কম। গোলাপ জলের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে, কিছু কিছু মানুষের ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। এ সমস্ত মানুষের জন্য গোলাপ জল কিছুটা সমস্যার হতে পারে। কিছু কিছু মানুষের এলার্জির সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে তাদেরকে অবশ্যই ত্বক পরীক্ষা করে, তারপর গোলাপ জল ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে যেমন-

ইত্যাদি, এই সমস্ত সমস্যাগুলো কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়। এমন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে, সেবা নিন। গোলাপ জলের অপকারিতা খুবই কম, সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। আর তাই যারা মনে করেন আপনাদের ত্বক অনেক বেশি সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল তারা শুধু গোলাপ জল নয়, যে কোন প্রোডাক্ট ব্যবহারের পূর্বে বুঝে ব্যবহার করুন। তা না হলে আপনাদের চর্ম রোগের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন কোন কোন ক্ষেত্রে গোলাপ জলের উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে।

নিত্যদিনের রূপচর্চায় গোলাপ জলের ব্যবহার অতুলনীয় ভাবে হয়ে আসছে। গোলাপ জল ব্যবহারে ঘরে বসেই কোনরকম কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ছাড়াই  ত্বক অনেক বেশি সুন্দর রাখা সম্ভব। গোলাপ জলের উপকারিতা অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই গোলাপ জলের ব্যবহার হয়ে আসছে, আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি গোলাপ জলের উপকারিতা সম্পর্কে। গোলাপ জলের উপকারিতা রয়েছে অনেক, ঠিক তেমনি গোলাপ জলের অপকারিতা রয়েছে খুব সামান্য।

তবে গোলাপ জলের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা খুবই কম। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে গোলাপ জলের ব্যবহারে, ত্বকে কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, ত্বকে হালকা জ্বালাপোড়া, চুলকানি ইত্যাদি। যাদের ত্বক অতি সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে, ত্বক পরীক্ষা করে প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি গোলাপ জলের উপকারিতা এবং গোলাপ জলের অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন, পোস্টটি ভাল লাগলে নিচে মন্তব্য করতে পারেন এবং পোস্টটি বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। ২৫২৪২