আতা ফলের উপকারিতা - আতা ফলের অপকারিতা

আতা ফলের উপকারিতা ও আতা ফলের অপকারিতা সকলের জেনে রাখা উচিত, কেননা আতাফল আমাদের অতি পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল। আমাদের শরীরের জন্য আতা ফলের উপকারিতা প্রচুর। কিন্তু আতা ফলের অপকারিতাও রয়েছে। এই পোস্টটি পুরোটা পড়লে আপনারা আতা ফলের উপকারিতা ও আতা ফলের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আতাফল আমরা প্রায় প্রত্যেকেই চিনি। কারো বা আবার প্রিয় ফল এই আতা। আতায় আমাদের দেহের জন্য উপযোগী বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই এই সুপরিচিত ফলটি আমাদের দেহের জন্য কি কি উপকার করে সে সম্পর্কে জানিনা। তাই আপনাদের সুবিধার্থে এই সমগ্র পোস্ট জুড়ে আতাফল এর উপকারিতা ও আতা ফলের অপকারিতা সমূহ তুলে ধরেছি। তাছাড়াও এই পোস্টটি থেকে আপনারা আতা ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।

পোস্ট সূচিপত্র - আতা ফলের উপকারিতা ও আতা ফলের অপকারিতা

আতা কেন খাবেন?

আমাদের প্রত্যেকের বাড়ির আশেপাশেই আতা ফলের গাছ দেখা যায়। আতাফল কে বিভিন্ন অঞ্চলে শরিফা, সীতা ফল, মেওয়া ফল ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। এই ফলের ভেতরে থাকে সুস্বাদু কোষ এবং ভেতরে থাকে কালো রঙের একটি করে বীজ। এই বীজের চারপাশের রসালো অংশটি আমরা খেয়ে থাকি। আতা ফলে বিভিন্ন ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ফসফরাস উপস্থিত রয়েছে যা আমাদের দেহ গঠনে সহায়ক। অতএব, আমাদের দেহের জন্য আতা ফলের উপকারিতা প্রচুর। আশা করি, আতা কেন খাবেন সে বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনারা অনুধাবন করতে পেরেছেন। 

আতা ফল খাওয়ার নিয়ম 

আতা ফলের স্বাদ কিছুটা নোনতা হওয়ার কারণে এটি অনেকের পছন্দ না। আবার অনেকের প্রিয় ফলের তালিকায় আতাফল অন্যতম। আতাফলের স্বাদ যেমনই হোক না কেন এর পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের চেয়ে অনেক বেশি। শরীরের জন্য দরকারী বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর এই আতাফল। পাকা আতা ফল আপনারা নিয়মিত খেতে পারেন। আতাফল পেকে গেলে ফলের উপর কিছুটা চাপ দিলেই তা ভেঙে যায়। আতাফল ভাঙার পর ভেতরের রসালো অংশটি মূলত খাওয়া হয়। 
প্রত্যেক দিনের সকালের নাস্তায় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি আতাফল রাখতে পারেন। আপনি চাইলে দুধের সাথে অথবা মধুর সাথে আতাফল মিশ্রিত করে খেতে পারেন। এতে করে আরো বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান শরীরে প্রবেশ করবে। আতাফল পেকেছে কিনা তা ফলের গায়ে টিপ দিলেই আপনারা আঁচ করতে পারবেন। শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে পাকা আতাফল খাওয়ার বিকল্প নেই। আতা ফলের উপকারিতা ও আতা ফলের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্টটি পড়তে থাকুন।

আতা ফলের উপকারিতা 

আতা ফলে এত এত সব পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের দেহের প্রতিরোধে সহায়তা করে। আতা ফল সাধারণত ইংরেজিতে "কাস্টার্ড অ্যাপেল" বা "সুগার পাইন অ্যাপেল" নামে অধিক পরিচিত। ডাক্তাররাও রোগীদের সুস্থতা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতা ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পোস্টের এই অংশে আমরা আপনাদের উদ্দেশ্যে আতা ফলের উপকারিতা সমূহ বিস্তারিত উল্লেখ করছি। অতএব নিচ থেকে আপনারা আতা ফলের উপকারিতা সমূহ পড়ে নিন।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন তারা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে আতা ফল খেতে পারেন। কারণ আতা ফলে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার উপস্থিত রয়েছে যা দেহে চিনির শোষণ কমিয়ে ফেলে। ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিসে ঝুঁকিও কমে যায়। 
  • হার্ট অ্যাটাকের বিরুদ্ধে: আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো এসিড উপস্থিত রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও আতাফলে থাকা ম্যাগনেশিয়াম যেকোনো কার্ডিয়াক সমস্যার বিরুদ্ধে কার্যকরী। 
  • বদ হজম প্রতিরোধ: বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে আতা ফুলের গুড়া এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে তা খেলে ডায়রিয়া, বদহজম সহ সকল পেটের সমস্যা দূর হয়। এটি বদহজম প্রতিরোধী কারণ আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে তামা ও ডায়েটরি ফাইবার থাকে। 
  • ত্বকের যত্ন এবং চুলের যত্ন: আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে 'ভিটামিন এ' বিদ্যমান থাকে। এটি ত্বক ও চুলে ব্যবহার করলে ময়েশ্চারাইজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। আতা ফল আমাদের ত্বককে এতটাই ভালো রাখে যে, একটি অনায়াসে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করতে পারে। আতা ফলের ছোট ছোট কোষ গুলো আলসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী এক উপাদান বলে বিবেচিত  
  • দাঁতের যত্নে: ডাক্তাররা অনেক সময় দাঁতের যত্নের জন্য আতা ফলের চামড়া ব্যবহার করা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটি ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ হওয়ার পাশাপাশি দাঁতের গোড়া অনেক শক্ত হয়। দাঁতের গোড়া থেকে অযাচিত রক্ত পড়াও বন্ধ হয়। 
  • ওজন বৃদ্ধিতে: আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান তবে একটি বাটিতে মধু এবং আতা ফলের বীজ ভালো করে মিশ্রণ করে সেটি নিয়মিত খেতে পারেন। তাহলে এক মাসের মধ্যে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। 
  • এজমা প্রতিরোধে: যারা হাঁপানের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য আতাফল অত্যন্ত উপকারী খাবার হতে পারে। এটি ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ যা আপনার অ্যাজমার বিরুদ্ধে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখবে। 
  • মানসিক চাপ কমাতে: আতাফল আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার ভালো রাখতে সহায়তা করে। যারা বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তারা সপ্তাহে অন্তত একবার আতা ফল খেতে পারেন। আতা ফল মানসিক চাপ কমাতে ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বেশ উপকারী। 
  • ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে: আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে এবং সমগ্র দেহে রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে আতাফল ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আতাফল অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে এবং হার্টকে কর্মক্ষম করে তুলে।
  • বিভিন্ন খাবার তৈরিতে: আতা ফল প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন মিল্ক শেক, সালাদ, আইসক্রিম, জুস ইত্যাদি খাদ্য তৈরি করা হয়। এই খাবারগুলো অনেকে পছন্দ করে থাকেন। 
  • গর্ভাবস্থায়: গাইনোকোলজিরা বলেছেন, আতা ফল খেলে এটি অকাল গর্ভপাতের মত সমস্যা নিরসন করে। তাছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের স্তনের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে আতা ফল বেশ সহায়ক। এটি শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে গর্ভবতী মায়েদের ব্যথার উপশম ঘটায়। অতএব, পোষ্টের এই অংশটি থেকে আপনারা আতা ফলের উপকারিতা গুলো পূর্ণাঙ্গভাবে জেনে ফেললেন। 

আতা ফলের অপকারিতা 

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা তো আতা ফলের উপকারিতা সম্পর্কে ইতোমধ্যে জেনেছেন। মনে রাখবেন প্রতিটি জিনিসের উপকারী দিক যেমন রয়েছে, তেমনি ক্ষেত্রবিশেষে সেই জিনিসটির ক্ষতিকর দিকও থাকতে পারে। আতাফল এর বেশ কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যা আপনাদের জেনে রাখা ভালো। তাই এখন আপনাদের সামনে আতা ফলের অপকারিতা গুলো সংক্ষিপ্ত পরিসরে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরবো। সুতরাং আপনারা আতা ফলের উপকারিতা গুলো নিচ থেকে পড়ে নিতে পারেন।
  • আতা ফলের খোসা ও বীজে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ উপস্থিত থাকে। যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা আতা ফল খেলে প্রচন্ড এলার্জির সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন। সেজন্য আতা ফল খাওয়ার সময় বীজ ও খোসা দূরে ফেলে দিতে হবে।
  • আতাফল অন্যান্য ফলের চাইতে কিছুটা ঠান্ডা প্রকৃতির। তাই যাদের অল্পতেই ঠান্ডা লাগার মত সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আমি বলব আতা ফল খাওয়া থেকে কিছুটা দূরে থাকাই উত্তম।
  • আতা ফল বেশি পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এমনকি বেশি আতা ফল খাওয়ার কারণে কিছু কিছু মানুষের ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হতে দেখা যায়।
  • আতা ফলে অনেক ক্ষতিকর কোষ থাকে যার চোখের জন্য ক্ষতিকর। তাই চোখের মত স্পর্শকাতর অঙ্গ থেকে আতা ফলের খোসা ও বীজ দূরে রাখতে হবে।
  • আতা ফল অনেক সময় বমি, মল ও শারীরিক দুর্বলতার কারণ হতে পারে। বেশি আতা ফল খেলে অন্ত্রে টান পড়ার মত সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। আশা করি, আতা ফলের উপকারিতাগুলো আপনাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে।

শেষ কথা

বন্ধুরা, পোস্টটি কি আপনারা পুরোটা পড়েছেন? যদি পুরো পোস্টটি অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তবে নিশ্চিতভাবেই আতা ফলের উপকারিতা ও আতা ফলের অপকারিতা সম্পর্কে বিশদ ধারণা অর্জন করেছেন। এখন চাইলেই আপনারা বন্ধুদের সাথে আতাফল এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো শেয়ার করতে পারেন। সর্বোপরি পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। আর এই ধরনের টিপস এন্ড ট্রিকস মূলক আরও আপডেটেড পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url