ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

সচেতনার অংশ হিসাবে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সকলের জেনে রাখা উচিত। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলার সুবিধার্থে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করব। সুতরাং, ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার জন্য আপনাদের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়ে ফেলতে হবে।
বর্তমানে মরণঘাতি ক্যান্সার রোগে সারা পৃথিবীতে মানুষের মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। একবার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়লে সেটি থেকে বাঁচার উপায় নেই বললেই চলে। চিকিৎসকরা ক্যান্সারের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জীবন যাপন পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে নিয়মমাফিক জীবন যাপন করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা অনেকটাই সক্ষম হবে। এই পোস্ট পুরোটা পড়লে আপনারা ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সময় সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাবেন। 

পোস্ট সূচিপত্র - ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

ক্যান্সার কত প্রকার 

পোস্টের শুরুতেই আপনাদের বলতে চাই ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় জেনে নেওয়ার পূর্বে আপনাদের ক্যান্সারের প্রকারভেদ সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণা থাকতে হবে। কেননা একেক ক্যান্সারের লক্ষণ একেক রকম হয়ে থাকে। তাই ক্যান্সারটি কোন ধরনের সেটি আগে শনাক্ত করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই উত্তম।  তাই চলুন ক্যান্সার কত প্রকার সেটি প্রথমে জেনে নিই।
  1. ব্লাড ক্যান্সার 
  2. স্কিন ক্যান্সার 
  3. বেস্ট ক্যান্সার 
  4. জরায়ু ক্যান্সার 
  5. ফুসফুস ক্যান্সার 
  6. মস্তিষ্কের ক্যান্সার
  7. মলদ্বারের ক্যান্সার 

ক্যান্সার সৃষ্টির কারণসমূহ

আমাদের পরিবেশগত পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। তবে ক্যান্সার সৃষ্টির পেছনে আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডই অধিক দায়ী। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় জেনে নেওয়ার পূর্বে কি কি কারণে ক্যান্সার হয়, সেই বিষয়টির সম্পর্কে আপনাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। সুতরাং, ক্যান্সার সৃষ্টি কারণসমূহ আগে পড়ে নিন। 
  • ৯০% ক্ষেত্রে পরিবেশগত কারণে ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। বাকি ১০% ঝুঁকি থাকে বংশানুক্রমিক ক্যান্সার সংক্রমণের ব্যাপারটিতে। জিনগত কারণে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ক্যান্সার সংক্রমিত হতে পারে। ব্রেস্ট ক্যান্সার, চোখের পর্দার ক্যান্সার ইত্যাদি বংশগত কারণে হয়ে থাকে। 
  • যারা তামাকজাত দ্রব্য খেয়ে থাকেন, তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ তামাকে এত বেশি পরিমাণ কেমিক্যাল দ্রব্য থাকে যা আমাদের দেহে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। সুতরাং তামাকজাত দ্রব্য ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।
  • দীর্ঘদিন যাবত যারা আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে, তাদের ক্ষেত্রেও ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ আর্সেনিকযুক্ত পানিতে অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকে যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। 
  • সূর্যের আলোতে থাকা আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সূর্যের আলো যাদের দেহে বেশি পরে বিশেষ করে পশ্চিমাদেশ গুলোতে স্কিন ক্যান্সার বেশি হতে দেখা যায়। 
  • যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদেরও ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। 
  • চর্বিযুক্ত খাবার (ফাস্টফুড) বেশি খেলে কোলন বা মলাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। সর্বোপরি অনিয়ন্ত্রিত ও অস্বাভাবিক জীবনযাপনের ফলে মানবদেহে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি এবং তা ছড়িয়ে যেতে পারে। এবার পোস্টের পরবর্তী অংশে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। 

ক্যান্সার প্রতিরোধের ৭ উপায়

ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে আপনারা ইতোমধ্যে ধারনা পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সব সময় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পূর্ব থেকে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ক্যান্সার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার সম্ভব হবে। এখন আপনাদের সামনে গবেষণা থেকে প্রমাণিত ও কার্যকর কিছু ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় বিস্তারিত তুলে ধরব। এখনই নিম্নোক্ত উপায়গুলো ভালোভাবে পড়ে নিন। 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: দেহের ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে অতিমাত্রায় বেড়ে যায় তবে দেহ খুব সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন নিজের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ফ্যাট জাতীয় খাবার না খেয়ে ফলমূল, শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন৷ দেহে স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখলে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। 
  • ধূমপান পরিহার: ধূমপানের কারণে যে শুধু ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি সৃষ্টি হয় তা কিন্তু নয়। একজন ধূমপায়ী ব্যক্তির খাদ্যনালী, পাকস্থলী, গলা, কিডনি ইত্যাদিতেও ক্যান্সার সংক্রমণ হতে পারে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য পুরোপুরিভাবে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • সূর্য থেকে নিজেকে বাঁচান: সূর্যের প্রখর তাপ ও ক্ষতিকার রশ্মি আমাদের ত্বকের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই রোদে বের হওয়ার সময় অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করবেন। আর রোদে বের হওয়ার পূর্বে অবশ্যই ত্বকের বিভিন্ন জায়গার সানস্ক্রিন মেখে বের হবেন। ফলে রোদের ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের ত্বকে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টি করতে পারবে না। 
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন: যে সকল খাবারে পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে রয়েছে, সে সমস্ত খাবারকে খাদ্যাভাসে অ্যাড করতে হবে। সকল প্রকার অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে। চিনি ও মিষ্টি যুক্ত পানীয় পান থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। ন্যাচারাল ফুড ও শাকসবজি অধিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস মানলেই কেবল  আমাদের দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান সঞ্চিত হবে। 
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করা: প্রাথমিক অবস্থায় যদি ক্যান্সার শনাক্ত করা যায় তবে সেক্ষেত্রে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাই ক্যান্সারের লক্ষণগুলো উপলব্ধি করে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেয়ে স্বাস্থ্য চেকআপ করতে হবে। 
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা: শারীরিকভাবে নিজেকে অধিক কর্মক্ষম রাখার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেজন্য রুটিন মাফিক নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। 
  • স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা: ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জীবনযাপন করতে হবে। সময় নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তবেই যেকোনো ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। আশা করি আপনারা ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়গুলো বুঝতে পেরেছেন। 

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় 

নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে প্রতিবছর অসংখ্য নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নানা কারণে একজন নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। চলুন জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়গুলো এক নজরে জেনে ফেলি। 
  1. অধিক সন্তান ধারণ করার প্রবণতা ত্যাগ করা। 
  2. অল্প বয়সে কোন নারীকে বিয়ে না দেওয়া। 
  3. যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অধিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। 
  4. ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিত্যাগ করা। 
  5. ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধক বিশেষ টিকা গ্রহণ করা। 
  6. একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে মিলিত না হওয়া। 
  7. ৩০ বছরের অধিক বয়সী নারীদের কয়েক বছর পর পর ভায়া টেস্ট করা। এ সকল প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জরায়ু ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যেসব খাবার 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা ইতোমধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেয়ে গেছেন। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য কিছু কিছু খাবার বেশ কার্যকরী। এ সকল খাবার প্রতিনিয়ত গ্রহণ করলে এগুলো আপনার দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধী কোষ উৎপাদন করবে। এবার চলুন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় হিসেবে কি কি খাবার আপনি গ্রহণ করতে পারেন তার তালিকা জেনে নিই।
  • আম 
  • আপেল 
  • কমলালেবু 
  • কলা 
  • জাম 
  • ডালিম বা বেদানা
  • টাটকা ফলমূল ও সবজি
  • ঢেঁড়স 
  • ব্রকলি 
  • বিট
  • সবুজ শাক
  • কালিজিরা 
  • মধু 
  • রসুন 

ইতি বার্তা

আপনার যদি এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তবে অবশ্যই ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়গুলো আপনাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে। এখন পোস্টে বর্ণিত ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়গুলো আপনি যদি সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন তবে নিশ্চিতভাবেই ক্যান্সার আপনার দেহে বাসা বাঁধতে পারবে না। ক্যান্সার যেহেতু আমাদের দেহে একবার আক্রমণ করলে তার প্রতিকার করা কঠিন, তাই উপযুক্ত প্রতিরোধই হতে পারে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে একমাত্র কার্যকর ব্যবস্থা। 

ক্যান্সার থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে জীবন যাপনের পাশাপাশি উন্নত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতাই পারে এই মরণঘাতী ব্যাধি থেকে আমাদেরকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখতে। পরিশেষে পোস্টটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। আর এই পোস্টটির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সকলের সাথে পোস্টটি এখনই শেয়ার করে দিতে পারেন। তাছাড়াও বিশ্লেষণমূলক বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে সব সময় আমাদের ওয়েবসাইটে নজর রাখুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url