বিধবা ভাতা কবে চালু হয়

আপনি কি জানেন বিধবা ভাতা কবে চালু হয়? যদি না জেনে তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে আমরা বিধবা ভাতা কবে চালু হয় এই তথ্যটি সহ বিধবা ভাতা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য উপস্থাপন করব। তাই বিধবা ভাতা কবে চালু হয় এই বিষয়টি সম্পর্কে দরকারী ও বিস্তারিত তথ্য সমূহ জেনে নিতে চাইলে এখনই পুরো পোস্টটি পড়ে ফেলুন।
আমাদের দেশে বিধবা হওয়ার হার নেহায়েত কম নয়। কিন্তু বিধবা হলে নারীদের জীবনে অনেক দুর্ভোগ দূর্দশা নেমে আসে। তাদের এই দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও নিবারণ করার জন্য বিধবা ভাতা চালু করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সরকারের এই উদ্যোগটি নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। এই পোস্টটি থেকে আশাকরি বিধবা ভাতা কবে চালু হয় এবং বিধবা ভাতা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক সব তথ্য আপনারা সহজ ভাষায় জেনে নিতে পারবেন। অতএব, এখনি পোস্টটি পড়া শুরু করে দিন।

পোস্ট সূচিপত্র - বিধবা ভাতা কবে চালু হয় জেনে নিন

বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা কারা?

বিধবা বলতে আসলে কি বোঝায় জানেন কি? বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা প্রদান করার জন্য সরকার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সেখানে 'বিধবা' বলতে কেবল সেসকল মহিলাদের বোঝানো হয় যাদের স্বামী মৃত। আর স্বামী নিগৃহীতা বলতে তাদের বোঝানে যায় যারা স্বামীর থেকে তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন অথবা অথবা ২ বছরের অধিক সময় ধরে কোনো কারণে স্বামীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছেন। এই পোস্টের পরবর্তী অংশে বিধবা ভাতা কবে চালু হয় সেটি জানতে পারবেন।

বিধবা ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্য কি

একটি মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বিধবা ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। সমাজে যারা বিধবা আছেন তাদের জীবনযাপন করতে যাতে কোনে প্রকার আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সরকার বিধবা ভাতা ব্যবস্থা চালু করে। বিধবা ভাতা কবে চালু হয় সেটি জেনে নেওয়ার পূর্বে চলুন পয়েন্ট আকারে জেনে নিই বিধবা ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্য গুলো কি কি।
  • সমাজে ছিন্নমূল, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের সমাজিক নিরাপত্তা বিধান ও মানবসম্পদ হিসাবে তাদের উন্নয়ন করা।
  • সমাজিক ভাবে তাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
  • তাদেরকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করা যেন তারা ভাতার টাকাটি সংসারের ব্যয় নির্বাহে খরচ করতে পারে।
  • তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
  • ভাতা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের মনোবলকে শক্ত করা যেন তারা কখনো নিজেদের একা না ভাবে। বরং, এই সমাজ-সরকার তাদের পাশেই রয়েছে এটি যেন তারা বুঝতে পারে।
  • একদম প্রান্তিক পর্যায়ের সকল বিধবারা যাতে সরকারের বিধবা ভাতার কার্ড হাতে পেয়ে আর্থিক নানা অনুদান গ্রহণ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা।
  • অনেক বিধবা রয়েছে যারা অত্যন্ত বয়স্ক, তাদের কাজ করার মতো সক্ষমতা নেই। সেই সকল মানুষ যাতে সরকারী সেবার আওতায় এসে বিধবা ভাতা গ্রহণ করতে পারে সেটি সুনিশ্চিত করা।
  • বিধবা ভাতা প্রদান করে দারিদ্র্যের হার কমানো বর্তমান সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশ। তাই সরকার দারিদ্র্যের হার কমানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর বাজেটে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিধবাদের ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখছে।
  • বিধবাদের আশ্রয়ন প্রকল্পও সরকারের চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। যার আসল উদ্দেশ্য হলো সমাজে যেন কোনো বিধবা আর্থিক কষ্টে না থাকে অথবা বসবাসের জায়গার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন না করে। সুতরাং, আপনারা বিধবা ভাতা প্রদানের মহৎ উদ্দেশ্যগুলো জেনে নিলেন।

বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য কি কি প্রয়োজন 

বিধবা ভাতা কবে চালু হয় এই তথ্যটি জেনে নেওয়ার পূর্বে বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র বা শর্তাবলী প্রয়োজন হয় সেটি আপনাদের জানাবো। তবে চলুন কি কি প্রয়োজন হয় তা জেনে নিই। 
  • যে এলাকা থেকে আবেদন করবেন সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। 
  • ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন এর মূল কপি থাকতে হবে। 
  • বয়োবৃদ্ধ, অসহায়, দুঃস্থ এবং নিগৃহীতা মহিলারা ভাতা পাবার ক্ষেত্রে অধিক অগ্রাধিকার পাবেন। 
  • বিধবাদের মধ্যে যদি কেউ প্রতিবন্ধী থাকেন তবে তারা সবার আগে বিবেচিত হবেন।
  • বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার কম হতে হবে। 
  • বিধবাদের মধ্যে যদি কেউ গৃহহীন থাকে তবে তারা অধিক অগ্রাধিকার পাবে। এই সকল শর্তগুলি পূরণ করলেই বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করা যাবে। 

বিধবা ভাতা কবে চালু হয়

আপনাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত জানতে চাওয়া প্রশ্ন বিধবা ভাতা কবে চালু হয় এই বিষয়টি এবার জেনে নিন। সমাজের দুঃস্থ, বিধবা, স্বামী, নিগৃহীতা মহিলাদের দূর্দশা দূর করে তাদের কল্যাণের জন্য ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থবছরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন তৎকালীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাদের জন্য একটি বিশেষ ভাতা চালু করা হয়। এটিই বিধবা ভাতা নামে পরিচিত যা এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। সে সময় বিধবা ভাতা অল্প পরিমাণ দেওয়া হলেও বর্তমানে বড় অ্যামাউন্টের টাকা দেওয়া হচ্ছে। যা বিধবাদের ভাগ্য পরিবর্তনে বেশ ফলপ্রসু ভূমিকা রাখছে। 

অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

আগে বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য লাইন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভায় প্রচন্ড ভোগান্তির মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে আপনি অনলাইনে অতি অল্প সময়ে সকল শর্তাবলী পূরণ করে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। চলুন অনলাইনে কিভাবে বিধবা হওয়ার জন্য আবেদন করবেন সেই প্রক্রিয়াটি জেনে ফেলি।
  • বিধবা ভাতা কবে চালু হয় আপনারা সে বিষয়ে জেনেছেন। আপনি যদি অনলাইন থেকে সরাসরি বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে চান তবে এই লিংকে চাপ দিন। এই লিংকে প্রবেশের পরে আপনাদের সামনে একটি পিডিএফ ফরম শো করবেন। 
  • এ ফরমে বিভিন্ন জায়গায় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হবে। সেসব তথ্য আপনাকে নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে। যদি আপনি তথ্য দিতে ভুল করেন পরবর্তীতে সেটা সংশোধনের সুযোগ থাকবে না। তাই নামের বানান, ঠিকানা,  ফোন নাম্বার সবকিছুই নির্ভুলভাবে প্রদান করুন। 
  • আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী সকল তথ্য সাবমিট করে, আপনার একটি ছবি সংযুক্ত করে দিবেন। আপনি যদি কাউকে বিধবা ভাতা আবেদনে সহায়তা করেন তবে এই বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন। 
  • সকল তথ্য সতর্কতার সহিত পূরণ করার পর আরো কয়েকবার চেক দিয়ে দেখে নেবেন সব ঠিকঠাক আছে কিনা। সাবমিট করার সময় বিশেষ করে বিষয়টি লক্ষ্য করবেন। সবশেষে সাবমিট করে বিধবা ভাতা আবেদন সফলভাবে শেষ করবেন। অতঃপর মনিটরিং কমিটি বিধবা ভাতা আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করে আপনাকে জানাবেন। 

বিধবা ভাতা কত টাকা দেওয়া হয় 

পোস্টের পরবর্তী অংশ হতে আপনারা বিধবা ভাতা কবে চালু হয় সে তথ্যটি জেনেছেন। ১৯৯৯ সালে যখন প্রথম বিধবা ভাতা চালু হয়, তখন একজন বিধবাকে মাসে মাত্র ১০০ টাকা করে দেওয়া হতো। যদিও তখন টাকার মান অনেক বেশি ছিল। বর্তমানে প্রায় ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার বিধবাকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়। অর্থাৎ, বছরে তারা বিধবা ভাতা বাবদ  ১৫০০০/- টাকা পেয়ে থাকে। এছাড়াও বিধবারা সরকার থেকে অনেক সময় বিভিন্ন সহায়তা ও অনুদান পেয়ে থাকে। 

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই পুরো পোস্টটি পড়ে বিধবা ভাতা কবে চালু হয় এবং বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম ও সেই ভাতায় কত টাকা পাওয়া যায় প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। আপনারা চাইলে আপনাদের আশেপাশে থাকা কোনো সুবিধাবঞ্চিত বিধবাকে তার প্রাপ্য বিধবা ভাতা পাওয়ার জন্য সহায়তা করতে পারেন। 

সামাজিক প্রাণী হিসাবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের উচিত বিধবাদের অধিকার যথাযথভাবে আদায়ে সহায়তা করা। আশা করি বিধবা ভাতা আবেদনের ক্ষেত্রে এই পোস্টটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে। পরিশেষে, পোস্টটি ভালো লাগলে এখনই অন্যত্র শেয়ার করে দিতে পারেন। আর নিত্যনতুন টপিক নিয়ে আরও পোস্ট পড়তে সর্বদা আমাদের সাথেই থাকুন। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url