ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি
তাহলে চলুন দেরি না করে ঝটপট ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্রঃ ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি
- ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি
- ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
- ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
- ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়
- আমাদের শেষ কথা
ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি
বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় ফল হল ড্রাগন ফল। আমরা সকলেই কমবেশি ড্রাগন ফল চিনি। আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যে সকল উপাদান প্রয়োজন সাধারণত সবগুলোই ড্রাগন ফলের মধ্যে পাওয়া যায়। তাই মানুষের কাছে ড্রাগন ফলের চাহিদা এত বেশি। যারা ড্রাগন ফল চাষ করতে চায় সাধারণত তাদের ড্রাগন ফলের চারা তৈরি করতে হয়। ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি কিভাবে করবে এ বিষয়টি অনেকেই জানে না।
আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার ২৫ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
কিন্তু আপনি চাইলে খুব সহজেই ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে পারবেন। আপনি বাজার থেকে অথবা যেখান থেকে ড্রাগন ফল সংগ্রহ করতে পারেন সে ড্রাগন ফলের বীজ দিয়েই আপনি খুব সহজেই চারা তৈরি করতে পারবেন। আপনি যদি ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে পারেন তাহলে এটি আপনার খরচ অনেক কমিয়ে দেবে।
ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করার জন্য আপনি কোকোপিট ব্যবহার করতে পারেন। এরপরে কোকোপিট গুলোকে ভালোভাবে আলাদা করে নিতে হবে। এরপরে উক্ত উপাদানটির সাথে ভালোভাবে পানি দিয়ে সেটি মেখে নিতে হবে। পানি দেওয়ার সাথে সাথে পানিগুলো কোকোপিট সংগ্রহ করে নেবে এবং আগের তুলনায় অনেক ফুলে বেশি হয়ে যাবে।
উপাদানটি পানির সাথে ভালোভাবে মিশ্রণ করা হলে এর সাথে আপনাকে গোবর সার মেশাতে হবে। আপনি চাইলে বাজারে থাকা যেকোনো ভালো মানের সার ব্যবহার করতে পারেন। এরপরে আপনাকে একটি ড্রাগন ফল নিতে হবে এবং মাঝ বরাবর কেটে নিতে হবে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে শুধু ড্রাগন ফলের বীজ পাওয়া যায় সেগুলো দিয়েও চারা তৈরি করা যাবে।
ড্রাগন ফল কেটে বীজগুলোকে ভালোভাবে আলাদা করে নিতে হবে। বীজ থেকে চারা তৈরি করার জন্য আপনাকে ছোট একটি চার অথবা পাঁচ ইঞ্চির পাত্র ব্যবহার করতে হবে। পাথরের নিচে যেন বেশ কয়েকটি ছিদ্র থাকে এ বিষয়টি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এরপরে আপনি যে কোকোপিট গুলো পানি দিয়ে মিশ্রণ করে রেখেছিলেন সেগুলো এই পাত্রের মধ্যে পরিমাপ মত দিন।
পাত্রের মধ্যে পরিমাপমতো উপাদান গুলো নিয়ে এরপরে আপনি যেই ড্রাগন ফলের বীজগুলো আলাদা করে রেখেছিলেন সেগুলো বপন করে দিতে হবে সে পাত্রের কোকোপিট এর ভেতরে। বীজগুলো পাত্রের মধ্যে বপন করার জন্য শুধু উপরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপরে এই বীজ গুলোর উপরে কিছু পরিমাণে কোকোপিট দিয়ে দিতে হবে।
তারপর উপাদান গুলোকে চেপে নিচের দিকে বসিয়ে দিতে হবে হালকা করে। যদি আগে থেকেই পানি হয়ে থাকে তাহলে পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই কিন্তু যদি শুকনো থাকে তাহলে অবশ্যই পানি দিতে হবে। এর পরে আপনাকে হালকা পরিমাণে পানি প্রয়োগ করতে হবে। এই পদ্ধতিতে যদি আপনি ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করেন তাহলে খুব সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই চারা পেয়ে যাবেন।
ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
খুবই জনপ্রিয় এবং চাহিদা সম্পন্ন ফল হল ড্রাগন ফল। আপনি যদি ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হতে চান তাহলে আপনাকে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি এই বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এতে করে আপনি খুব সহজে বাড়িতে বসেই চারা তৈরি করে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারবেন।
জমি নির্বাচন চারা রোপণ - জমি নির্বাচন করার সময় বেশ কিছু বিষয় সম্পর্কে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে অনেকেই বলে থাকে যে ড্রাগন ফল যে কোন মাটিতেই ভালো ফলন দেয়। তবে আরো ভালো ফলন পেতে হলে এবং আপনি যদি লাভবান হতে চান তাহলে উঁচু এবং মাঝারি উঁচু উর্বর জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি বড় পরিসরে ড্রাগন ফল চাষ করতে চান তাহলে বেশ কয়েকদিন ধরেই আপনাকে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
প্রথমে আপনাকে আপনার জমি নির্বাচন করতে হবে এবং জমিতে যেন কোন আগাছা না থাকে এই বিষয়টি সম্পর্কে লক্ষ্য রাখতে হবে। জমি তৈরি করার জন্য আপনাকে কয়েকটি চাষ দিয়ে ভালোভাবে মই দিয়ে দিতে হবে। ড্রাগন ফল রোপনের সবথেকে উপযোগী সময় হলো এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এর মধ্যে চারা রোপণ করলে চারা ভালোমতোই বড় হয়।
চারা রোপন করার জন্য ২ মিটার আকারে গর্ত করে নিতে হবে এরপরে রোদে খোলা অবস্থায় রেখে দিতে হবে। গর্ত তৈরি করার ২০ থেকে ২৫ দিন পর প্রতিটি গর্তে ২৫ থেকে ৩০ কেজির গোবর পচা সার, ২৫০ গ্রাম টিএসপি সার এবং আরো বেশ কিছু সার রয়েছে যেগুলো গর্তের মধ্যে দিতে হবে। চারা রোপনের এক মাস পর থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে তিন মাস পর পর ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা - ড্রাগন ফলের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নত মানের হওয়া খুবই জরুরী। ড্রাগন ফল একেবারেই খরা এবং জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই যখন মৌসুম শুষ্ক থাকে তখন ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ফলন্ত গাছের তিনবার এবং ফুল ফোটার অবস্থায় একবার ছেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি
যারা শহরে বসবাস করে সাধারণত তাদের যেকোনো ধরনের ফসল চাষ করার একটি উপায় হল ছাদ। কেউ কেউ তাদের বাড়ির ছাদকে সম্পূর্ণ বাগান করে দেয়। এখন আপনি যদি আপনার ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করতে চান তাহলে বেশ কিছু পদ্ধতির সম্পর্কে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি এবং ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি কিভাবে করতে হয় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছি।
আরো পড়ুনঃ কমলা খাওয়ার ৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা
১। ছাদে যদি ড্রাগন ফল চাষ করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে ড্রাম অথবা টব নির্বাচন করতে হবে। একটু বড় ধরনের ড্রাম অথবা টব ব্যবহার করতে হবে। ড্রাগন গাছ যখন বড় হবে তখন সেই গাছের শিকড় গুলো যেন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এ বিষয়টি লক্ষ্য রেখে।
২। সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন ফল ভালো হয়ে থাকে। তবে ড্রাগন ফলের আরো ভালো ফলন পেতে হলে আপনাকে মাটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। বেলে দোআঁশ মাটিতে সবথেকে ভালো ড্রাগন উৎপাদন হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে আপনাকে এই মাটি নির্বাচন করতে হবে ড্রাগন ফল চাষের জন্য।
৩। এরপরে মাটিগুলোকে ভালোভাবে নরম করে ড্রাম অথবা টবের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে মাটি দিতে হবে এবং আপনাকে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন চারা লাগানোর পরে পানি দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা থাকে এই পরিমাণ জায়গা খালি রাখতে হবে।
৪। ড্রাগন ফল চাষ করার উপযুক্ত সময় হল এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। আপনি যদি এই সময়ের মধ্যে চারা রোপন করেন তাহলে ভালো ফল পাবেন বলে আশা করা যায়। চারা লাগানোর পর থেকে আপনাকে গাছের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
৫। ড্রাগন ফলের গাছে বিভিন্ন ধরনের রোগ বলাই দেখা যায়। এগুলো আপনাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে। কারণ যদি বেশি পরিমাণে রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে ফলন ভালো না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে কোন রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে আপনাকে এটি দমন করার চেষ্টা করতে হবে।
ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন অনেকেই এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়? বিশেষ করে যারা ড্রাগন ফল চাষ করতে চাই সাধারণত তাদের মুখে এই প্রশ্নটি বেশি শোনা যায়। আপনি যদি চান তাহলে নিজের বাড়িতে বসেই ড্রাগণ গাছের চারা তৈরি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ড্রাগন ফল।
এছাড়া আপনি যদি ড্রাগন ফলের চারা কিনে নিতে চান তাহলে আমাদের আশেপাশে অনেক নার্সারি রয়েছে। আপনাকে প্রথমে একটি নার্সারি খুজে বের করতে হবে এবং সেখানে যোগাযোগ করতে হবে যে ড্রাগন ফলের চারা পাওয়া যায় কিনা। সাধারণত এই সকল নার্সারিতে যেকোনো ধরনের ফল এবং ফুলের চারা থাকে। সবথেকে ভালো কাজ হবে আপনি যদি বাড়িতেই চারা তৈরি করতে পারেন।
আমাদের শেষ কথাঃ ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে ড্রাগন ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি, ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি, ছাদে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি, ড্রাগন ফলের চারা কোথায় পাওয়া যায়? এ বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ড্রাগন ফল চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। চাষ শুরু করার আগে বিষয়গুলো জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী।
আরো পড়ুনঃ কমলার খোসা ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমরা নিয়মিত এ ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকি।২০৭৯১
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url