যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল
যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল আপনারা কি সে সম্পর্কে জানতে চান? জামরুলের বেশ
কিছু ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। তাই যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল তথা জামরুলের
গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে রাখতে পারেন। এই পোস্টটি পুরোটা পড়লে
আপনারা যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সে সম্পর্কে কার্যকরী সব তথ্য জানতে
পারবেন।
গ্রীষ্মকালকে মধুমাস বলা হয় কারণ এ সময় আমাদের দেশে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। এই
গরমকালে প্রচুর পরিমাণে জামরুল দেখা যায়। জামরুল খেতে ততটা সুস্বাদু না হলেও
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জামরুলের আশ্চর্য সব ওষুধি গুণাগুণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাই
এই পোস্টটিতে আপনাদের জন্য যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সে সম্পর্কে
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি। আশা করি এই পোস্টের তথ্যগুলো আপনাদের দারুন কাজে
দেবে। সুতরাং, এখনই পোস্টটি পড়ে ফেলুন।
পোস্ট সূচিপত্র - যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল জেনে
জামরুলের বিভিন্ন উপাদান
যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সেটি জেনে নেওয়ার পূর্বে জামরুলের ভেতরে কি কি
উপাদান রয়েছে সে সম্পর্কে প্রথমে জেনে নিন। জামরুলে আমাদের শরীরের জন্য উপযোগী
বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো জামরুলে বিভিন্ন পরিমাণে উপস্থিত রয়েছে।
যদিও জামরুলের প্রায় ৯০% ই জলীয় অংশ। বাকি ১০% বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর রয়েছে
জামরুল। প্রত্যেকটি উপাদান আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
- জলীয় অংশ
- ক্যারোটিন
- ভিটামিন বি২
- ভিটামিন বি১
- ভিটামিন সি
- কার্বোহাইড্রেট
- ফ্যাট
- প্রোটিন
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
- আয়রন
- পটাশিয়াম
- সালফার
- ক্লোরিন
- খনিজ পদার্থ
- আমিষ
- এবং ক্যালরি
যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল
মধুমাসে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে জামরুল পাওয়া যায়। জামরুল সাধারণত সাদা
অথবা লাল বর্ণের হয়ে থাকে। খেতে ততটা সুস্বাদু না হলেও এর কিন্তু রয়েছে প্রচুর
ওষুধি গুনাগুন। তাই জামরুলের ওষুধি গুনাগুন সমূহ আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তবে চলুন যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল তথা জামরুলের
আশ্চর্য সব ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে এবার জেনে ফেলি।
- জামরুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আমরা জানি ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের দেহে স্কার্ভি রোগ হতে পারে। তাই তারপর প্রতিরোধে জামরুল হতে পারে অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতি ১০০ গ্রাম জামরুলে ২২ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ ভিটামিন সি থাকতে পারে। ভিটামিন সি ত্বকের তারুণ্যতা ধরে রাখতে সহায়ক। জামরুল খেলে তাই ভিটামিন সি এর সকল অভাবজনিত রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- যাদের হজমে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে প্রত্যেকদিন জামরুল খেতে পারেন। জামরুলে প্রচুর পরিমাণ ডিয়াটরি ফাইবার রয়েছে। এটি আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই দেহের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য জামরুল খাওয়ার বিকল্প নেই।
- শরীরের ভেতর জীবাণু ও বর্জ্য পদার্থ বেড়ে গেলে জামরুল তা নিষ্কাশনে ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ জামরুল আমাদের কিডনি ভালো রাখতে ভূমিকা পালন করে।
- জামরুলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ উপস্থিত থাকে। অপরদিকে আমাদের দেহে 'ভিটামিন এ' এর পরিমাণ কমে গেলে চোখের বিভিন্ন সমস্যা হতে দেখা যায় যেমন: চোখে ছানি পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি। সুতরাং জামরুল খেলে এই ফলটি চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করবে।
- হাড় ও দাঁতের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে জামরুল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতি ১০০ গ্রাম জামরুলে ২৯ মিলিগ্রাম পরিমাণ পর্যন্ত ক্যালসিয়াম উপস্থিত থাকে। তাই হাড় ও দাঁতের গঠন নিশ্চিত করতে জামরুল খাওয়া যেতে পারে।
- জামরুলে উপস্থিত পটাশিয়াম শরীরে ইলেকট্রোলাইটের যথাযথ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- দেহে বিভিন্ন সংক্রমণ জনিত রোগ প্রতিরোধ করতে জামরুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বোপরি জামরুল আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- আমাদের শরীরে পানির অভাবজনিত রোগগুলো জামরুল খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ ১০০ গ্রাম জামরুলের ৯৩ ভাগই থাকে পানি। ফলে এটি খেলে শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
- পেট ফাঁপা ও ডায়রিয়া রোগ প্রতিরোধে ডাক্তাররা রোগীদের জামরুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। জামরুল সর্বোপরি বদহজমজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করে। সুতরাং, পোস্টের এই অংশটি থেকে আপনারা যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করেছেন।
জামরুলের আরও কিছু উপকারিতা
জামরুল এমন একটি ফল যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ডাক্তাররা প্রায়শই
রোগীদের জামরুল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা জামরুলের রয়েছে প্রচুর
ঔষধি গুনাগুন। একই সাথে জামরুল রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। পোস্টের আগের অংশ
হতে আপনারা যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। এবার
এই আশ্চর্য জামরুল ফলটির আরও কিছু উপকারিতা জেনে নিন।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধে: জামরুলে অবস্থিত জামবোসিন নামক উপাদান শর্করা উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর জামরুলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য আদর্শ ফল হতে পারে এই জামরুল।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে: জামরুলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি উপস্থিত রয়েছে। এছাড়াও জামরুলে এমন কিছু সক্রিয় যোগ্য রয়েছে যা প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম। তাই গরমের সময় বেশি বেশি জামরুল খেতে পারেন।
- পানির চাহিদা পূরণ: একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রচুর পানির চাহিদা রয়েছে। জামরুল খাওয়ার মাধ্যমে দেহে পানির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করা সম্ভব। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয়।
- হাড় সুগঠিত করতে: শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে জামরুলের ভূমিকা রয়েছে। জামরুলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। আর ক্যালসিয়াম দেহের হাড় গঠনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী উপাদান। সুতরাং হাড়ের গঠন সুগঠিত ও মজবুত করার জন্য জামরুল খাওয়া যেতে পারে।
- স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়: বর্তমানে স্ট্রোক ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জামরুলে সোডিয়াম অনুপস্থিত থাকা ও এইচডিএল এর মাত্রা বেশি থাকায় এটি সহজেই দেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- লিভারের রোগ সারাতে: জামরুলের ভেতর এক ধরনের হেপাটোপ্রটেকটিভ উপাদান রয়েছে, যা অত্যন্ত সফলভাবে আমাদের লিভারের বিভিন্ন কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। আপনারা যদি যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সে সম্পর্কে আবারো জানতে চান তবে পোস্টের আগের অংশটিতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিন।
জামরুল কিভাবে খাবেন
প্রিয় বন্ধুরা এ পর্যন্ত পোস্টটি পড়ে আপনারা যেসব রোগ প্রতিরোধ
করবে জামরুল সে সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেয়ে গেছেন। এই স্বাস্থ্যকর ফল জামরুল
ভাবে খাবেন এবার সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক। আপনি চাইলে জামরুল সরাসরি
গাছ থেকে নামিয়ে পরিষ্কার করে খেতে পারেন। আবার জামরুল জুস অথবা আচার করেও
খেতে পারেন। যেভাবেই জামরুল খান না কেন এটি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অতএব, জামরুল খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের বাহিরে দেশগুলোতে জামরুলকে অন্যতম উপাদেয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়ে
থাকে। নিয়মিত জামরুল ফল পাওয়ার জন্য বাড়ির আশেপাশে জামরুল গাছ লাগাতে পারেন।
তাহলে যখনই এই ফলের মৌসুম আসবে তখনই বাড়ির পাশ থেকে খুব সহজেই এই ফলটি সংগ্রহ
করতে পারবেন। জামরুলের রোগ প্রতিরোধী গুনাগুন সত্যিই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
অত্যন্ত উপকারী। আর জামরুলের কোনো খোসা না থাকায় ফলটি গাছ থেকে সংগ্রহ করে খুব
সহজেই খাওয়া সম্ভব।
শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা এই পোস্টটিতে আমরা জামরুলের যাবতীয় ওষুধি গুনাগুন ও উপকারী দিক
সমূহ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। জামরুলের এত এত ওষুধি গুনাগুন
আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই মৌসুমী ফল হিসাবে দেশি এই ফলটি বেশি
বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন মহান আল্লাহ তা'আলা এই মৌসুমী ফলগুলো
মানুষের উপকারের জন্যই নেয়ামত হিসেবে দান করেছেন। জামরুলে উপস্থিত সকল উপাদানই
আমাদের দেহ গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করি এতক্ষণে আপনারা যেসব রোগ প্রতিরোধ করবে জামরুল সে সম্পর্কে
পূর্ণাঙ্গ একটি ধারণা পেয়ে গেছেন। জামরুলের এসব উপকারিতা আপনার অন্যান্য
বন্ধুদেরকেও জানাতে পারেন। সেজন্য অবশ্যই আপনাকে এই পোস্টটি তাদের মাঝে শেয়ার
করে ফেলতে হবে। পরিশেষে পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট
করে জানাতে পারেন। আর নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস সংক্রান্ত আরও পোস্ট পেতে
আমাদের ওয়েবসাইট ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ। @23891
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url