মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায়

ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় জানাটা অনেক বেশি গুরুতর। এই পোস্টে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো। মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায়টি এই মাসিক চক্রানুসারে নারীদের দেহে ঘটে থাকে। যার ফলে মাসিকের ব্যথা অনেকের ক্ষেত্রে খুব অস্বস্তিকর হয়।
বেশিরভাগ সময়ই মেয়েদের যখন প্রথম মাসিক হয় তখন মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় সম্পর্কে খুব বেশি জানা থাকে না। পরবর্তীতে যা শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার ওপর খুব প্রভাব ফেলে। যদি আপনার ব্যথার তীব্রতা খুব বেশি হয়ে যায়, অতিরিক্ত রক্তপাত হয়, সেক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসককে দেখানো উচিত।   

পেজ সূচিপত্র

মাসিকের সময় ব্যথা কেমন হয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় অজানা থাকে যেমন, মাসিকের ব্যথা কোমর থেকে উরুতে অথবা পা পর্যন্তও ব্যথা করতে পারে। আবার, ব্যথাটি অনেক সময় কোমর থেকে তলপেটে খিচ বা কামড়ে ধরার মতো হয়ে থাকে। কখনো কখনো আবার একটানা ব্যথা করতে থাকে। 

আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঋতুস্রাব কেন হয় তা জানুন 

প্রতিমাসে নিয়মিত মাসিকের সময় একেক রকম হতে পারে যেমন, কোন মাসে হয়তো বা অনেক বেশি ব্যথা করছে কিন্তু আবার কোন মাসে দেখা যায় মৃদু ব্যথা হয় যা অস্বস্তির কারণ হয় না। আবার অনেক সময় তলপেটে একটানা ব্যথা করতে পারে।

মাসিকের ব্যাথা কত সময় পর্যন্ত স্থায়ী থাকে

মেয়েদের মাসিকের ব্যথা মাসিক শুরু হওয়ার কয়েকদিন পূর্ব থেকেই শুরু হয়ে যায়। অনেক সময় কিশোরীদের এই মাসিকের ব্যথাটা ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টা একটানা রক্তপাত হতে থাকে। যার ফলে কিশোরীদের পর্যাপ্ত রক্তক্ষরণের ফলে মাসিকের ব্যথা খুব বাড়ে। 

কারও যদি প্রথম পিরিয়ড হয় সেক্ষেত্রে ব্যথা অনেক বেশি হবে। আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাসিকের ব্যথাও অনেকাংশে কমে যেতে থাকে। নারীরা যখন সন্তান জন্ম দেয় তখনও ধীরে ধীরে মাসিকের ব্যথা কমে যেতে পারে।

মাসিকের সময় পেট ব্যথার কারণ

নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় ও মাসিকের সময় পেট ব্যথার কারণগুলো হরমোনের প্রভাবে হয়ে থাকে যা প্রজননের সাথে অনেকটুকু সম্পর্কযুক্ত। দেহের মধ্যে হরমোনের মাত্রা যখন কমে যেতে থাকে তখনই মাসিক শুরু হয় আর এই অবস্থায় জরায়ুর ভিতর এক ধরনের আস্তরণ মাসিকের রক্তের সাথে বের হয়ে যেতে থাকে। 

জরায়ুর দেয়ালটি এই আস্তরণটি ঠিকভাবে বের হওয়ার জন্য সংকুচিত হয়ে যায় যার ফলে জরায়ুর মধ্যে যে রক্তনালী রয়েছে সেগুলো সংকুচিত হতে থাকে। মাসিকের সময় পেট ব্যথার কারণ এ জরায়ুতে অক্সিজেন ও রক্ত প্রবাহের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে এই অক্সিজেনের অভাবে দেহের মধ্য থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যায় যার ফলে মাসিকের ব্যথা অনেক বেড়ে যায়। 

প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যেটি মাসিকের সময় পেট ব্যথার কারণ এ জরায়ুর দেয়ালকে অনেক বেশি সংকুচিত করে ফেলে। এর ফলে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় না জানলে মাসিকের ব্যথা আরও বেড়ে যেতে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে জানা যায় যে, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন মাঝে মাঝে অনেক ক্ষেত্রে এতটাই তীব্র হয় যে মাসিকের ব্যথা পর্যাপ্ত পরিমাণে বেড়ে যায়।

মাসিকের ব্যথা যেসব রোগের ফলে হয়

অনেক সময় দেখা যায়, মহিলাদের মাসিকের ব্যথা শরীরের অন্যান্য রোগের কারণেও বেড়ে যেতে পারে। যে সমস্ত রোগের ফলে মাসিকের ব্যথা বাড়তে পারে ও মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত দেয়া হলো - 

  • মেয়েদের জরায়ুর ভিতরে যে টিস্যু থাকে অনেক সময় সেটি রক্তপাতের সাথে বের হয়ে আসে সেক্ষেত্রে ব্যথা খুব বেশি হতে পারে।
  • জরায়ুর পেশীতে যদি কোন ধরনের টিউমার থাকে তাহলে সেটি অনেক সময় ফাইব্রয়েডের ফলে অধিক রক্তপাত ও পেট ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • অনেক সময় ডিম্বনালি ও ডিম্বাশয় এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ইনফেকশন হলে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • এডেনোমায়োসিস নামে এক ধরনের কোষ যদি জরায়ুর ভিতর থেকে বের না হতে পারে সেই ক্ষেত্রে মাসিকের সময় পেট অধিক ব্যথা করতে পারে এবং অধিক রক্তপাতও হতে পারে।

মাসিক হলে পেটে ব্যথার সমাধান

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় ও মাসিক হলে পেটে ব্যথার সমাধান রয়েছে। জরায়ুতে চাপ পড়ার ফলে মেয়েদের মাসিকের সময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয় যা মাঝে মাঝে অনেকের ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করে। ব্যাথার তীব্রতা অনেক সময় কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে পেশী সংকোচন ও প্রসারণের ক্ষেত্রেও খুব সমস্যা হয়ে যায়। মাঝে মাঝে প্যারাসিটামল ওষুধ খেয়ে এই ব্যথা কমাতে পারেন। 

আরও পড়ুনঃ মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায় জেনে নিন

অনেকেরই দেখা যায়, মাসিক হলে পেটে ব্যথার সমাধান এর জন্য অতিরিক্ত ব্যথা হলে হালকা ডোজের পেইন কিলার দিয়ে থাকে। মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্য আদা চা খুব ভালো কাজ করে থাকে যা ব্যথা কমানো এবং বমির ভাবও দূর করতে সাহায্য করে। তলপেটে অনেক সময় তিলের তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে ব্যথা কমে যায়। গোল মরিচ দিয়ে চা অথবা হারবাল চা খেলে অনেক সময় ব্যথা অনেক অংশে কমে যায়।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায়

আপনি চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাসিকের ব্যথা কমানোর জন্যে কিছু পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে পারেন। মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় ও মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায় এর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যার মধ্যে হলো -

১। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করাঃ

মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায় হল পেটে ব্যথা যদি অনেক বেশি বেড়ে যায় তাহলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন যার ফলে অনেক সময় মাসিকের ব্যথা কমে যায়। এটি আপনাকে অনেকটুকু আরাম দিতেও সাহায্য করতে পারে।

২। ধূমপানকে ত্যাগ করাঃ

মহিলারা যদি প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল বা ধূমপান সেবন করে থাকে সেক্ষেত্রে মাসিকের ব্যথাটা তাদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। ধূমপানের ফলে যে মাসিকের ব্যথা হয় সেটির ফলে আপনার ঝুঁকি অনেক টুকু বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

৩। টিইএনএস ব্যবহার করাঃ

পেটে ব্যথা কমানোর জন্য ব্যাটারি চালিত এক ধরনের ছোট যন্ত্র রয়েছে যার নাম হচ্ছে ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রনিক নার্ভাস স্টিমুলেশন। হালকা বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে এই এই যন্ত্রটি পেটে ব্যবহার করা যায়। টিইএনএস ব্যবহার করার মাধ্যমে পেটের ব্যথা অনেক  কমাতে সাহায্য করে।

৪। পেটে ম্যাসাজ করাঃ

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় হল পেটে আলতো ভাবে মেসেজ করা। পেটে ব্যথা যখন বেড়ে যাবে তখন পেটের চারপাশে বিশেষ করে তলপেটে আলতো ভাবে অল্প অল্প করে ম্যাসাজ করলে পেটের ব্যথা কমতে পারে।

৫। সেঁক দেওয়াঃ

মাসিকের ব্যথা কমানোর উপায় এর মধ্যে এটি অন্যতম। পেটে ব্যথার মাত্রা অনেক যদি তীব্রতর হয়ে বেড়ে যায় তাহলে হালকা গরম সেঁক এর মাধ্যমে হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যথা কমতে পারে। তবে হট ওয়াটার ব্যাগ খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। 

যেমন, হট ওয়াটার ব্যাগের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে নিতে হবে এবং কিছু সময় পরপর ব্যাগ উল্টেপাল্টে ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি হিটিং প্যাডও ব্যবহার করতে পারেন।

৬। শরীর চর্চা করাঃ

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় হল পেটে ব্যথা কমাতে আপনি ব্যায়ামের মাধ্যমে যেকোনো সময়ে শরীরকে ভালো রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার মাসিকের ব্যথা কমে যেতে পারে। মাঝে মাঝে আপনি সাইকেল চালিয়ে ও হাঁটার মাধ্যমেও ব্যায়ামের জন্য নিজেকে সচল রাখতে পারেন।

৭। নিজেকে চাপমুক্ত রাখাঃ

আপনি যদি নিজেকে মানসিকভাবে চাপমুক্ত না রাখেন সেক্ষেত্রে আপনার পেটের ব্যথা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। আপনি চাইলে মেডিটেশনের মাধ্যমে ও বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম করে নিজেকে অন্যদিকে ধাবিত করে ব্যথার অনুভূতি থেকে মুক্ত হতে পারেন।

মাসিকের জন্য পেটে ব্যথা কমাতে ব্যায়াম 

মহিলাদের মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় ও ব্যায়াম বিদ্যমান। মাসিকের সময় পেটে অনেক ব্যথা হয় যা তার কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এই পেটে ব্যথা মাসিক শুরু হওয়ার আগে থেকেই শুরু হতে পারে অথবা যেদিন মাসিক হওয়ার দিন সেদিনও শুরু হতে পারে। 

একজন মহিলার এই ব্যথা ৩০-৩৫ বছরের পর থেকে বয়স হওয়ার সাথে সাথে এটিও ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট নিয়ে এই ব্যথা কমানো যেতে পারে। তবে বাসায় প্রতিদিন ব্যায়ামের মাধ্যমে কিছু নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে। 

আরও পড়ুনঃ রোজা থাকা অবস্থায় মাসিক হলে করণীয়

যেমন, আপনাকে নিয়মিত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে। লেবুর শরবত, বিভিন্ন ফলের শরবত, পুদিনা পাতা ও আদা দিয়ে চা খেতে পারেন। অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং নিজেকে সম্পূর্ণ মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে হবে। অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় পরিহার করতে হবে। তলপেটে বেশি ব্যথা করলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে সেঁক দিতে পারেন। 

বিভিন্ন ধরনের এক্সারসাইজ, মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় এবং ব্যায়াম করে নিজেকে একটু আরাম দিতে পারেন। যেমন, কিছু স্ট্রেচিং ও অ্যারোবিক ব্যায়াম, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ ইত্যাদি। আপনি স্ট্রেচিং ব্যায়ামের জন্য কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশটুকু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভাঁজ করে হাতটা শরীরের উপরের অংশে রেখে পাঁচ সেকেন্ড এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকুন। 

অথবা পায়ের আঙ্গুল কে ভর করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। আবার, দুই পা ভাঁজ করে চিত হয়ে হাত দুটো সমান্তরালে রেখে পা এর ওপরে ভর করে পাঁচ সেকেন্ড থাকুন। আপনি যখন বারবার এই ব্যায়ামগুলো করতে থাকবেন তখন আপনার মাসিকের যে ব্যথা রয়েছে সেটি ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকবে।

উপসংহার

মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কেন হয় তার উপায় সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আপনার জন্যে পোস্টটি যদি কাজে লেগে থাকে তাহলে নিচের অংশে মন্তব্য করুন এবং সেই সাথে আমাদের পাশেই থাকুন। ২৫২৭৫


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url