ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সতর্কীকরণ লক্ষন জেনে, সচেতন হই।

ভূমিকাঃ

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এই রোগের মূল কারণ মানুষের রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে না থাকা।

যা চিকিৎসা না করা হলে গুরুতর জটীলতার দিকে যেতে পারে। ডায়াবেটিস যে কোন বয়সে বিকশিত হতে পারে। প্রাথমিক সর্তকতা লক্ষন যেনে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার পড়তে হতে পারে।

পেজ সূচিপত্রঃ

ঘন ঘন প্রসাব ও তৃষ্ণা বৃদ্ধি।

আপনার কি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বাথরুমে যেতে হচ্ছে। কারণ আপনার কিডনি রক্তের অতিরিক্ত চিনি ফিল্টার করতে অতিরিক্ত কাজ করছে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, যা পলিউরিয়া নামে পরিচিত। এটি কেবল অসুবিধাজনকি নয়, এতে আপনি ক্লান্ত বা ডিহাইড্রেটেড বোধ করতে পারেন। আপনি যদি ঘন ঘন প্রস্রাব করেন তা হলে বুঝবেন আপনার শরীর রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে।

আপনি কি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করছেন? আপনি কি মনে করেন যে যতই পানি পান করছেন তৃষ্ণা নিবারণ হচ্ছেনা? তাহলে বুঝনেন যে আপনার শরীর আপনাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে, যে আপনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন। ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া। যা পলিডিপসিয়া নামে পরিচিত। যখন আপনার রক্তে শর্করার পরিমান বেশি থাকে, তখন আপনার শরীর আপনার টিস্যু থেকে অতিরিক্ত জল টেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে আপনি বেশি তৃষ্ণাত হয়ে উঠেন। তাহলে ডায়াবেটিস পরীক্ষার জন্য আপনাকে ডাক্তারের সাথে কথা বলা জরূরি।  

অতিরিক্ত ওজন হ্রাস।

ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সর্তকতা লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম দ্রুত শরীরের ওজন হ্রাস। যদিও ওজন কমানো কারো কারো কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে, খাদ্যাভ্যাস বা ব্যায়ামের অভ্যাসের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই হঠাৎ ওজন হ্রাস পাওয়া কখনই ভালো লক্ষণ নয়। এটি ডায়াবেটিসের পূর্ব আভাস মাত্র। যখন আপনার শরীর ইনসুলিন প্রতিরোধের বা ঘাটতির কারণে শক্তির জন্য গ্লুকোজকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারবেনা। তখন এটি প্রয়োজনীয় শক্তি পেতে চর্বি এবং পেশীর টিস্যু গুলো ভেঙে ফেলবে, যা আপনার শরীরের স্বাস্থ্য হ্রাসের কারণ।

আপনার জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আপনার ওজন উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় তাহলে বুঝবেন আপনার শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেধেছে। আর দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য। যাতে আপনার ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম ঝুঁকির কারণ। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে ডায়াবেটিস আপনার স্বাস্থ্যের উপর মারাক্তক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যার মধ্যে হৃদরোগ, কিডনির ক্ষতি এবং দৃষ্টির সমস্যা হরে পারে। অতএব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওজন হ্রাসের মত যে কোনো লক্ষণের সমাধান করা উচিত।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব।

ক্লান্তি এবং দুর্বলতা হল সাধারণ উপসর্গ যা ডায়াবেটিসের সুচনায় হতে পারে। অনেকে ক্লান্তি ও অলসতা অনুভব করে, তবে সবসময় ক্লান্তি এবং দুর্বলতা ডায়াবেটিসের মতো অন্তর্নিহত স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া সত্ত্বেও আপনি যদি ক্লান্ত বোধ করেন তবে এটি উদ্বেগের কারন হতে পারে। ডায়াবেটিস আপনার শরীরে গ্লুকোজ প্রক্রিয়া করার পদ্ধতিকে বাধা দিয়ে থাকে। গ্লুকোজ শারীরিক শক্তির মূল উৎস, যা শরীরকে ক্রমাগত শক্তি প্রদান করে থাকে।

আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার ক্লান্তি ও দুর্বলতা খাদ্যাভ্যাস এবং বিশ্রামের সাথে উন্নতি হচ্ছে না, তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ন। আপনার লক্ষণগুলি ডায়াবেটিস বা অন্যকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতা হবে। ক্লান্তি এবং দুর্বলতা ছাড়াও ডায়াবেটিসের আরোও আনেক লক্ষণ রয়েছে।

 

চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা।

ঝাপসা দৃষ্টি ডায়াবেটিসের একটি প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে অন্যতম। আনেকে মনে করা বার্ধক্য চোখের ঝাপসার জন্য দায়ী। যাইহোক, এটি স্বীকার করা গুরুত্বপুর্ন যে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে হঠাৎ পরিবর্তন ডায়াবেটিসের মতো আরও গুরুত্বর অভ্যান্তরিন স্বাস্থ্য  সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা ধারাবাহিকভাবে বেশি থাকলে এটি চোখের লেন্সের আকার পরিবর্তন করতে পারে। যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়।

এটি ঘটতে পারে যখন রক্তে অতিরিক্ত চিনি চোখের লেন্স ও টিস্যু থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে ফোকাস করতে সমস্যা হয়। আপনি যদি অস্পষ্ট দৃষ্টি অনুভব করেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চোখের ডাক্তারের দ্বারা আপনার চোখ পরিক্ষা করা প্রয়োজন। চিকিৎসা না করালে আরও গুরুতর চোখের সমস্যা যেমন ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা রেটিনার রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ঝাপসা দৃষ্টি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গও হতে পারে। যাই সমস্যা হোক, পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।

ধীর নিরাময় ঘা বা বেশি বেশি সংক্রমণ।

ধীর নিরাময় ঘা বা বেশি বেশি সংক্রমণ আপনাকে জটিল কোন দিকে ধাবিত করছে। যা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলির সাথে মিলে যাচ্ছে। আপনার শরীরে  উচ্চ রক্তের শর্করার মাত্রা সিস্টেমকে দুর্বল করে দিতে পারে। যা শরীরের পক্ষে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকরা কঠিন করে তুলছে। যখন আপনার শরিরে ডায়াবেটিস থাকে, তখন আপনার শরীর তাড়াতাড়ি ক্ষত বা ঘা নিরাময় করতে পারেনা। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে থাকে।

তাই যখন দেখবেন যে আপনার শরীরে কোনো ঘা হলে তাড়াতাড়ি সারছেনা। তা হলে বুঝবেন কোন না কোন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু উচ্চ রক্তে শর্করার আপনার শরিরে বেশি থাকে, সে জন্য ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বৃদ্ধি পায়, তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে এই ধরনের সংক্রমের সাথে বেশি বেশি মোকাবিলা করতে হয়। চিকিৎসা না করলে অবস্থা আরও জটিলের দিকে যেতে পারে। এই বিষয়ে সর্তক থাকবেন, সুস্থ্য জীবন যাপন করবেন।   

শেষ কথাঃ

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ডায়াবেটিসের প্রথমিক সতর্কীকরণ লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।  তৃষ্ণা বৃদ্ধি, ঘন ঘন প্রস্রাব, ওজন হ্রাস এবং ঝাপসা দৃষ্টি মতো লক্ষণগুলি সনাক্ত করে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিরীক্ষণে সচেতণ থাকতে হবে। সঠিক ব্যবস্থাপনা আপনার জীবনপযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। আপনার জীবনের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে। সচেতন থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আটিকেলটি পড়ে ভালো লাগলে, বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url